• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

এখনও আলোর মুখ দেখেনি কুষ্টিয়ার তিন অর্থনৈতিক অঞ্চল

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১২ মার্চ ২০২৩

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
বার বার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন জটিলতায় কুষ্টিয়ার অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন কুষ্টিয়ায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পনগরী ও স্থলবন্দর গড়ে উঠলে এঅঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে এবং অর্থনৈতিক শক্তি চাঙ্গা হবে। তবে জেলার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল জমি হস্তান্তর ও কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের কাজ এরআগে সম্পন্ন হলেও দৌলতপুর সীমান্তে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করতে প্রাগপুরে স্থলবন্দর স্থাপন দীর্ঘদিনের দাবী থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখলে নতুন নতুন কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ভাগ্য বদলের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন বিশেজ্ঞরা।
দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর থেকে লালনশাহ সেতু হয়ে জাতীয় মহাসড়ক মাত্র ২০ কিলোমিটার ও ওপারে পশ্চিমবঙ্গের শিকারপুরে ভারতের জাতীয় মহাসড়ক। ব্রিটিশ আমলে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর একটি সেতু ছিল। সে সময় ব্যবসা-বানিজ্য ও মানুষের যাতায়াতের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার করা হতো প্রাগপুরকে। কালক্রমে ওই সেতু বিলীন হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য। তাই ব্যবসা-বানিজ্য সহজতর করতে ফের পথটি চালু করা দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
তথ্য মতে, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় প্রস্তাবিত প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়িত হলে দু’দেশের আমদানী-রপ্তানীর ক্ষেত্রে ফের ব্যাপক সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। প্রাগপুর স্থল বন্দর বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-কলকাতার দূরত্ব কমিয়ে দিতে পারে ১০০ কিলোমিটার। যা দু’দেশের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বড় ধরণের অর্থনৈতিক সাশ্রয় করতে পারবে। এছাড়া প্রাগপুরে স্থলবন্দর বাস্তবায়িত করতে অবকাঠামো তৈরীর ক্ষেত্রেও বড় কোন অর্থের দরকার হবে না দু’দেশের সরকারের। মহাসড়ক কাছাকাছি হওয়ায় অনায়াসে পন্য আমদানী-রপ্তানী করা মত অনুকুল পরিবেশ রয়েছে। শুধুমাত্র মাথাভাঙ্গা নদীর উপর ছোট্র একটি ব্রীজ নির্মাণ করা দরকার। তাছাড়া বৈধ পথে পন্য আমদানী-রপ্তানীর সুযোগ সৃষ্টি হলে চোরাচালানসহ অবৈধ পথে পন্য আনা নেয়াও বন্ধ হবে। ফলে প্রচুর পরিমানে রাজস্ব পাবে সরকার। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মস্থান। তাই প্রস্তাবিত এই স্থলবন্দরটির দ্রুত বাস্তবায়ন চান স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।
তথ্যসূত্র বলছে, অর্থনেতিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত হওয়ায় ঐহিহাসিক গুরুত্ব দিয়ে ২০১১ সালে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান কুষ্টিয়ায় সফরে এসে প্রাগপুর সীমান্তে স্থলবান্দর স্থাপনের ঘোষনা দেন। এরপর প্রাগপুর সীমান্তে সরেজমিনে এসে স্থলবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করে গেছেন নৌপরিহবন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলও। ভূমি জরিপসহ অন্যান্য কাজও হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও প্রাগপুরে স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কার্যক্রম। ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্যদিয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এজন্য ভেড়ামারা উপজেলার চরমোকারিমপুর, আরাজিসারা এবং চররুপপুরে মৌজায় প্রায় ৫০৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে। রেলওয়ে এবং সরকারের অব্যবহৃত জমি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় এই এলাকাটিকেই বেছে নেয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য। ২০১৭ সালে ১০ জুন জেলা প্রশাসন ৩১২ একর খাস জমির দলিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর থেকে এ প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি হয়নি। এখনো দফায় দফায় স্থান পরিদর্শনের মধ্যেই রয়ে গেছে কার্যক্রম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস সহজলভ্যতার জন্য দেশের ২২টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী স্থান হিসেবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলাকে বিবেচনা করে ভারত সরকার এবং সে দেশের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা মনে করেন, ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে এ এলাকায় তথা কুষ্টিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
অন্যদিকে শুধুমাত্র জমির রেকর্ড জটিলতায় ভুল থাকার কারণে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনে বিলম্ব হচ্ছে। বিসিক শিল্পনগরীর জন্য বার বার সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। বিসিকের থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ঋণ নিয়ে শিল্পে জড়িয়ে অনেকে সফলতা পেলেও কেউ কেউ নানাবিধ কারণে পুঁজি পর্যন্ত হারিয়ে পথে বসেছে। মুলতঃ নির্ধারিত জায়গা না থাকায় অপরিকল্পিত ও বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে কুমারখালীর তাঁতসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।
কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের দাবী উঠে আসছে বহুদিন থেকেই। বিএনপি জোট সরকার জিলাপীতলায় এর জায়গা নির্ধারণও করেছিল। কিন্ত সরকার পরিবর্তন হলে সেটা ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারে আমলে সাবেক এমপি আব্দুর রউফ চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন।
কুমারখালীতে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়তে তারই ধারাবাহিকতায় নতুন করে আধুনিক ও পরিকল্পিত একটি বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি মহাসড়কের কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশের ডোবা ভরাট করে ১০০.৫৬ একর জায়গায় শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হলেও জটিলতায় তা ভেস্তে গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads